বাড়ি ফেরায় তবু উচ্ছ্বাস

পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষ কর্মদিবসে রাজধানী ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ। গতকাল ভোর থেকে ট্রেন, বাস, লঞ্চ ছাড়াও প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়িমুখে ছুটে মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মোটর সাইকেলের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাগ-ব্যাগেজ বেঁধে একাকি কিংবা স্ত্রী-সন্তানকে তুলে শত শত মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়েন অনেকেই। নাড়ির টানে নগরবাসীর এই ঘরে ফেরায় কার্যত ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী।

মহাসড়কসমূহে বড় ধরনের যানজট না থাকলেও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বেশিরভাগ স্থানেই ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। এদিকে ভোর ৫টা থেকেই ঘাট থেকে লঞ্চগুলো ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চেই দেরিতে ছেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাড়ি ফিরতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত দেখা গেছে বাস এবং রেল স্টেশনে। গতকালও রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ছিল ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। ফিরতি ট্রেনের বিলম্বে পৌঁছানো আর মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ভিড়ের কারণে কমলাপুর থেকে যথাসময়ে ট্রেনগুলো ছাড়া যাচ্ছে না। গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনেই ছিল ভিড়। বিভিন্ন রুটের প্রতিটি ট্রেন ছিল যাত্রীতে ঠাঁসা। আসন ছাড়াও ট্রেনের ভিতরে দাঁড়িয়ে, পাদানিতে ঝুলে, ইঞ্জিনের সামনে পেছনে আর ছাদে চড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন ঘরমুখো মানুষ। ঈদের আগে গতকাল পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলগামী কয়েকটি ট্রেনের যাত্রায় দেরি বিষাদ ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। গরমের মধ্যে শিশুদের ভোগান্তি ছিল লক্ষণীয়। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ৫৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০ মিনিট পর ছেড়েছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৭টা ২৫ মিনিটে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা দেরি করে বেলা সাড়ে ১০টায় স্টেশন ছেড়ে যায়। এদিকে সকাল ৮টায় খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা। জিআরপি থানার অতিরিক্ত উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার সকাল ৮টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান সুমন জাহিদ নামে ওই ব্যক্তি। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদের বাসা খিলগাঁওয়ে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, ভোর থেকে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারগুলোতে নিজ নিজ গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। তবে বাসের ক্ষেত্রে ঘরমুখো মানুষের একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কারণ নির্ধারিত সময়ের বড়জোর আধা ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন ছেড়ে গেলেও দূরপাল্লার বাস ছাড়তে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। তবে এত কষ্টের পরও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন আরও বেশি কিছু পাওয়া হিসেবে দেখছেন তারা। যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, জনস্রোত, দুর্ঘটনা, যানবাহনের সংকট, ছাদে চড়ার ঝুঁকি—সব কিছু ছাপিয়ে, সব ভোগান্তি সয়ে ঈদযাত্রা শেষ পর্যায়ে। সড়কপথে ভোগান্তির যাত্রায় পদে পদে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এত বিড়ম্বনার মধ্যেও শেকড়ের টানে আপন ঠিকানায় ছুটছে মানুষ। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ইউনিক পরিবহনের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, সকালে যাত্রীর বেশি চাপ ছিল। দুপুরে তেমন যাত্রী নেই। তবে রাতে চাপ বাড়বে। নৌপথেও বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার যাত্রী চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ।